আপনি জানলে অবাক হবেন, আমি এমন কিছু ব্যক্তিকে চিনি যারা বিসিএস এর সবগুলো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ক্যাডার হতে পারে নি। কি অবাক হন নি? আচ্ছা আমি বুঝিয়ে বলছি।
বিসিএস ক্যাডার বাংলাদেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ চাকরি। তাই এই চাকরিতে নিয়োগ দেওয়ার পূর্বে যোগ্যতাগুলো খুব ভালোভাবে যাচাই করা হয়। যদিও শর্তগুলো আহামরি কিছুই না, যেমন বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, এসএসসি, এইচএসসি ও স্নাতক তিনটি পরীক্ষার যেকোন দুটিতে ৩য় শ্রেণী না থাকা, সর্বোচ্চ ৩০ বছর এবং শারীরিক যোগ্যতা।
অনেকেই প্রশ্ন করেন যে আমি মোটা ফ্রেমের চশমা ব্যবহার করি আমি কি ক্যাডার হতে পারবো? আবার কেউ ভাবেন আমার সিজিপিএ কম আমি কি পারবো? এরকম অসংখ্য দুশ্চিন্তা করি আমরা। এগুলা কোনটাই আপনার সমস্যা করবেনা যদি না আপনার এসএসসি ও এইচএসসির কোনটাই ৩য় শ্রেণী থাকে।
আজকে আমরা বিসিএস পরীক্ষার যোগ্যতা নিয়ে আলোচনা করবো।
বিসিএস ক্যাডার প্রত্যাশীদের ৪ ধরনের যোগ্যতা দেখা হয়।
১। শিক্ষাগত যোগ্যতা
২। বয়সসীমা
৩। নাগরিকত্ব
৪। শারীরিক যোগ্যতা
বিসিএস এর নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা
বিসিএসের আবেদন করার জন্য একজন প্রার্থীকে এসএসসি, এইচএসসি ও স্নাতক(৪ বছর মেয়াদী কোর্স) পাস করতে হবে। তবে কোন প্রার্থী যদি এইচএসসি পরীক্ষা শেষে ডিগ্রি বা সমামানের তিন বছর মেয়াদী কোর্স করেন তাহলে তাকে বিসিএসে আবেদনের জন্য ডিগ্রী পাসের পরে স্নাতকোত্তর বা মাস্টার্স পাশ করতে হবে।
এসএসসি থেকে স্নাতক পর্যন্ত সবগুলো পরীক্ষায় কোন প্রার্থীর যদি যেকোন দুটিতে দ্বিতীয় শ্রেণী বা সমমান এবং ১টি তৃতীয় শ্রেণী বা সমমান এর নিচে পায় তবে সেই প্রার্থী বিসিএস পরীক্ষা দিতে পারবে না। অর্থাৎ কারো যদি একাধিক পরীক্ষায় ৩য় শ্রেণী থাকে তবে সে বিসিএস পরীক্ষা দিতে পারবে না।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে আমাদের রেজাল্ট তো দেয় জিপিএ তে তাহলে কোন গ্রেডে কোন শ্রেণী? বিষয়টা খুব সহজ নিচের লেখাটা পড়লেই বুঝতে পারবেন।
জিপিএ থেকে শ্রেণী বের করার পদ্ধতিঃ
For SSC and HSC:
প্রথম শ্রেণী = জিপিএ ৩ এর থেকে বেশী
দ্বিতীয় শ্রেণী = জিপিএ ২ এর থেকে বেশী ৩ এর কম
তৃতীয় শ্রেণী =জিপিএ ১ এর থেকে বেশী ২ এর কম।
অনার্সের ক্ষেত্রেঃ
প্রথম শ্রেণী = জিপিএ ৩ এর থেকে বেশী
দ্বিতীয় শ্রেণী = জিপিএ ২.২৫ এর থেকে বেশী ৩ এর কম
তৃতীয় শ্রেণী =জিপিএ ১.৬৫ এর থেকে বেশী ২.২৫ এর কম।
বয়সসীমাঃ
পিএসসি যে মাসে বিসিএস এর বিজ্ঞাপন জারি করবে সে মাসের ১ম তারিখে যদি কোন প্রার্থীর বয়স –
- ২১ বছরের কম হয় অথবা ৩০ বছরের বেশি হয় তাহলে ওই প্রার্থী বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
তবে কিছু ক্ষেত্রে বয়স সীমা শিথিল যোগ্য।
- মুক্তিযোদ্ধার পুত্র বা কন্যা, প্রতিবন্ধী, স্বাস্থ্য ক্যাডারের প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর।
- বিসিএস সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ক্যাডারে উপজাতীদের জন্য সর্বোচ্চ ৩২ বছর।
নাগরিকত্বঃ
বাংলাদেশের নাগরিক নয় এমন কোন ব্যক্তি বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। সরকারের অনুমতি ব্যতিরেকে কোন বিদেশী নাগরিককে বিয়ে করলে বা বিয়ে করার প্রতিজ্ঞা করলে তিনি বিসিএস পরীক্ষা দিতে পারবেন না।
শারীরিক যোগ্যতাঃ
লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মেডিকেল টেস্ট করানো হয়। মেডিকেল টেস্টে পাশ না করলে ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া যায়না।
মেডিকেল টেস্টে সাধারণতঃ
- উচ্চতা, ওজন ও বক্ষ পরিমাপ করা হয়।
- দৃষ্টিশক্তি যাচাই করা হয়।
- মূত্র পরীক্ষা করা হয়।
উচ্চতা, ওজন ও বক্ষ পরিমাপঃ
পুরুষ প্রার্থীর ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন উচ্চতা ৫ ফুট হতে হবে। সর্বনিম্ন ওজন ৪৯.৯৯ কেজি। তবে পুলিশ ও আনসার ক্যাডার এর জন্য সর্বনিম্ন উচ্চতা ও ওজন যথাক্রমে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি ও ৫৪.৫৪ কেজি হতে হবে।
মহিলা প্রার্থীর জন্য সর্বনিম্ন উচ্চতা ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি। মহিলা প্রার্থীর সর্বনিম্ন ওজন ৪৩.৫৪ কেজি। তবে পুলিশ ও আনসার ক্যাডার এর জন্য মহিলা প্রার্থীর সর্বনিম্ন উচ্চতা ৫ ফুট হতে হবে। সর্বনিম্ন ওজন ৪৫.৪৫ কেজি হতে হবে।
উল্লেখ্য যে, ওজন কম হলেও বাড়ানোর সুযোগ দেয়া হয়।
দৃষ্টিশক্তিঃ দৃষ্টিশক্তির জন্য নিম্নলিখিত মানদন্ড অনুযায়ী বিবেচনা করা হয়।
সহজ কথায় চোখে সমস্যা থাকলে ও চশমা ব্যবহার করার পরে যদি কোন সমস্যা না থাকে তাহলে ক্যাডার হতে কোন সমস্যা নেই। কেউ যদি রঙ ধরতে না পারেন তাহলে ও তিনি বিসিএস এ যোগ্য হবেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে এই তথ্য উনার রিপোর্টে লিখা থাকতে হবে।
বক্ষ পরিমাপঃ উচ্চতার সাথে বক্ষ পরিমাপে নিম্নোক্ত চার্ট অনুসরণ করা হয়।
মূত্র পরীক্ষাঃ মূত্র পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে যাবতীয় রিপোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়।
স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেডিকেল টিম গঠন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালক। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কোন প্রার্থী অযোগ্য বিবেচিত হলে তা প্রার্থীকে এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন কে জানানো হয়।
একজন প্রার্থীকে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পূর্বে এই যোগ্যতাগুলো ও বিসিএস পরীক্ষার পদ্ধতির সকল তথ্যাবলী ভালোভাবে জানা উচিৎ। তাই এইগুলো ভালোভাবে দেখে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হয়।